আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ॥ মুজিববর্ষ উপলক্ষে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ৩৬ ভূমিহীন পরিবার পেলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর। গতকাল শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপকারভোগী পরিবারের নিকট এসব ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাশেম এর সভাপতিত্বে উপজেলার ভূমিহীন ৩৬টি পরিবারের মাঝে গৃহের চাবি ও জমির কাগজপত্র বিতরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মোশাররফ হোসাইন, ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার, বিপুল দাস, মোস্তফা সরদার, শফিকুল ইসলাম টিটুসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তারা। ‘আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে নির্মিত হয় এসব ঘর। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে গৃহ ও ভূমিহীন ৩৬ পরিবারের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এই ঘর। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ২০২০-২১ অর্থ বছরের আওতায় একটি ঘরের জন্য মোট ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এসব ঘরে দুইটি কক্ষ, বারান্দা, রান্নাঘরসহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকছে। ঘরগুলো নির্মাণে সার্বিক তদারকি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ। গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য সরকারি খাস জায়গায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৩৬জন ভূমিহীনদের বাচাই করে তাদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে গৈলা ইউনিয়নে ১৯টি, বাকাল ইউনিয়নে ৭টি, রাজিহার ইউনিয়নে ৫টি, রত্নপুর ইউনিয়নে ৫টিসহ মোট ৩৬টি ঘর নির্মিত হয়েছে। উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের মধ্য শিহিপাশা গ্রামের ভূমিহীন পাখি মালী বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরের বাড়িতে থেকেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জায়গাসহ ঘর দিচ্ছেন। এতে আমি খুবই খুশি। ছেলে মেয়েদের নিয়ে পাকা ঘরে থাকতে পারব।’ একই গ্রামের রেনুকা শেলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘর উপহার দিচ্ছেন এতে আমরা খুবই আনন্দিত। অন্যের বাড়িতে ছেলে মেয়ে নিয়ে কষ্ট করে থেকেছি। এখন শান্তিতে থাকতে পারব।’ প্রতিবন্ধী সুন্দর লাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দিছেন, ঘর পাইয়া আমি অনেক খুশি। তার জন্য আমি দুই হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি। সরকারের কাছে জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়ে বাকাল গ্রামের দিনমজুর জয়দেব বাড়ৈ, দিনমজুর রহিমা আক্তার, স্বপন কুমার দে, গৈলা ইউনিয়নের সেরাল গ্রামের গৃহিনী খাদিজা আক্তার, নূরজাহান বেগম, দিনমজুর আলাউদ্দিন সিকদারসহ সুফলভোগী অনেকেই জানান, জীবনের এই দীর্ঘ সময়েও তারা এক টুকরো জমি বা একটি বাড়ি করা তো দূরের কথা দৈনন্দিন শ্রম বিক্রি করে সেই অর্থে কোন রকমে সংসার চালিয়ে খেয়ে বেঁচে আছেন। যেখানে কোন রকমে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে থাকতেন, সেখানে সরকার আমাদের নামে জমি দলিল দিয়ে সেখানে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন; যা এখনো স্বপ্নের মতোই মনে হয়। এজন্য তিনি শেখের বেটিকে (জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা) মন ভরে দু’হাত তুলে দোয়া করে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। নতুন পাকা বাড়ি পেয়ে তারা অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে আরও বলেন, আমাদের মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি সবসময় অসহায়, গরীবদের খোঁজ খবর নিয়ে অসহায়দের পাশে দাড়ান। তার জন্যই আজ আমরা জমিসহ এই নতুন পাকা বাড়ি পেলাম। তার বাবা সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতও ছিলেন অসহায় গরীবের বন্ধু। বাবার মতো আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এলাকার উন্নয়ন কাজ ও সাধারণ মানুষের ভালবাসার কারণে অসহায় মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবুল হাশেম বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এ উপজেলায় ৩৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ কাজ শেষে তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘর গুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মোঃ লিটন সেরনিয়াবাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই ভূমিহীন ও গৃহহীনরা সারা দেশে ঘর পাচ্ছেন। স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র নির্দেশে তালিকা প্রণয়ন থেকে শুরু করে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগীতা করা হয়েছে। দুঃস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, কোন লোক গৃহহীন থাকবে না, মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য পাকা বাড়ি নির্মান করে দিচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় আগৈলঝাড়ায় ৩৬টি বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে।
Leave a Reply